“ত্রিনাথ সাঁই: বড় পলাশন গ্রামের মাটি থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে”
ত্রিনাথ সাঁই: গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতির পথে এক অনন্য যাত্রা
ত্রিনাথ সাঁই, পূর্ব বর্ধমান জেলার বড় পলাশন গ্রামের এক কৃতী সন্তান, আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজের এক বিশেষ পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। সাধারণ এক গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই প্রতিভাবান লেখক ও শিল্পী নিজের কর্মদক্ষতা, অধ্যবসায় এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভালবাসার মাধ্যমে সকলের মন জয় করেছেন।
শৈশব থেকেই তাঁর সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। দেশবরেণ্য সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর অনুপ্রেরণায় তিনি প্রথম উপন্যাস রচনা করেন। সেই উপন্যাসটি দেশ ও দেশের বাইরে সাহিত্য মহলে বিপুল প্রশংসা অর্জন করে। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই কৃতিত্বের জন্য তাঁকে সম্মানিত করা হয়। এটি তাঁর সৃজনশীল জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
মহাশ্বেতা দেবীর বাড়িতে অবস্থানকালে তাঁর জীবনের আরেকটি স্মরণীয় মুহূর্ত ঘটে। তিনি সাক্ষাৎ করেন পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেন, “অনেক বড় হও, তোমার নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।” এই শুভাশিসকে তিনি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি বলে মনে করেন। তাঁর কাছে মুখ্যমন্ত্রী ভগবানের মতো, আর সেই ভগবানের কাছ থেকে আশীর্বাদ পাওয়া তাঁর জীবনের এক পরম সৌভাগ্য।
তিনি দৃঢ় বিশ্বাস করেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অসংখ্য যুগান্তকারী প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। ছোট থেকে বড়—সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ এসব প্রকল্পের সুফল পেয়েছে। এই প্রকল্পগুলির তাৎপর্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে তিনি এক অভিনব পথ বেছে নেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি নৃত্যের মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলিকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন। শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং তাঁকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
সম্প্রতি তিনি আন্তর্জাতিক আইকন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এই সম্মান তাঁর জীবনের আরেকটি বড় অর্জন। তবে ব্যক্তিগত কৃতিত্ব হিসেবে নয়, তিনি এই পুরস্কারকে উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রেরণার দুই প্রতীক—মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর মতে, তাঁদের নীতিনিষ্ঠ কাজ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে।
তিনি গর্বিতভাবে বলেন যে তিনি একজন পশ্চিমবঙ্গবাসী। তাঁর কাছে “জয় বাংলা” শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং এক আত্মিক চেতনা, যা তাঁকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করতে। তাঁর জীবনকাহিনি প্রমাণ করে, গ্রামের মাটিতেও লুকিয়ে থাকে অসীম সম্ভাবনা, যা সঠিক দিকনির্দেশনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে নিয়ে যেতে পারে।
ত্রিনাথ সাঁই আজ এক অনন্য উদাহরণ, যিনি প্রমাণ করেছেন যে শিল্প ও সাহিত্য শুধু ব্যক্তিগত প্রকাশ নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার। তাঁর যাত্রা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে—গ্রামের সাধারণ পরিবেশ থেকেও কিভাবে দৃঢ়সংকল্প ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেওয়া যায়।
*******************************